স্বদেশ ডেস্ক:
ভারত অধিকৃত কাশ্মির নিয়ে নয়া দিল্লির অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদ ‘সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া’ দেখাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কাশ্মির নিয়ে কোনো ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’ তৈরি হলে তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায়ী থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার দেশটির প্রতিরক্ষা দিবসে দেয়া বিবৃতিতে ইমরান এসব বলেছেন।
১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়া পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের স্মরণে ইসলামাবাদ প্রতি বছর দিবসটি পালন করে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই সমগ্র কাশ্মিরের মালিকানা দাবি করলেও, দুটো দেশই এর পৃথক দু’টি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। নয়া দিল্লি সম্প্রতি তাদের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মিরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে উপত্যকাটিকে দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেয়ার পর পাকিস্তান এর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালিত রেডিওতে দেয়া বিৃতিতে ইমরান বলেন, ‘পাকিস্তান যে যুদ্ধ চায় না, বিশ্বকে সে কথা জানিয়েছিলাম আমি। একই সাথে পাকিস্তান তার নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার ওপর চলে আসা প্রতিবন্ধকতায় মুখ বুজে থাকবে না। শত্রুকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া দেখাতে প্রস্তুত আমরা। এর পরে যেকোনো বিপর্যয়কর পরিণতির জন্য ব্যর্থ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ই দায়ী থাকবে।’ এর আগে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের এ প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। পাকিস্তান প্রথমে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপে জড়াবে না বলেও আশ্বাস ছিল তার।
এক দিন আগে এক টুইট বার্তায় কাশ্মির ইস্যুতে আবারো ভারতের তীব্র সমালোচনা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ উপত্যকায় মানবাধিকারবিষয়ক আইন লঙ্ঘিত হলেও বিশ্ব সম্প্রদায় নীরব থাকায় প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
ইমরান খান টুইট বার্তায় বলেন, ‘মোদি সরকারের দখলদার ভারতীয় বাহিনী দ্বারা জম্মু-কাশ্মিরকে অবরুদ্ধ করে রাখার ৩২ দিন পার হলো। এই অবরোধের মধ্যে ভারতীয় বাহিনী হত্যা করেছে, আহত করেছে (বন্দুকের গুলি দিয়ে), কাশ্মিরি নারী, পুরুষ ও শিশুদের অপব্যবহার করেছে। বহু কাশ্মিরিকে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে নেয়া হয়েছে।’
কাশ্মিরের হাসপাতালগুলোতে মেডিক্যাল সাপ্লাই শেষ হয়ে গেছে উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, ‘কাশ্মিরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে মৌলিক প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সাপ্লাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর থেকেও ভয়াবহ খবর পাওয়া যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।’ অন্য টুইট বার্তায় ভারতের তীব্র সমালোচনা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার আইনসহ আন্তর্জাতিক আইনগুলো লঙ্ঘন করছে ভারত, যা বিশ্ব দেখছে। তারপরও বিশ্ব নীরব কেন?’ ইমরান আরো বলেন, আসাম ও কাশ্মিরে যে ‘জাতিগত নিধন’ চলছে তা দেখছে বিশ্ব। হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মির নিয়ে নয়া দিল্লিøর ওপর চাপ বাড়াতে ইমরান যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রের নেতাদের সাথে দফায় দফায় কথা বললেও কাজ হয়নি। এ দিকে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রতিরক্ষা দিবসের এক আয়োজনে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার আহমেদ বাজওয়া বলেছেন, ‘পাকিস্তান কখনোই কাশ্মিরকে ত্যাগ করবে না। তিনি বলেন, কাশ্মিরি ভাইদের জন্য আত্মত্যাগে শেষ বুলেট, শেষ সৈন্য ও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত; এ জন্য যতখানি যেতে হয় আমরা প্রস্তুত।’
কর্তৃপক্ষের আশ্বাসেও দোকান খুলছে না কাশ্মিরে
ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের সময় রাজ্যটিকে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য দিয়ে ভরিয়ে ফেলা হয়। তবে গত কয়েক দিনে কেন্দ্র সরকার নিরাপত্তা কড়াকড়ি কমিয়েছে। তারা নানান আশ্বাস দিয়ে ব্যবসায়ীদর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান খুলতে উৎসাহ জোগাচ্ছে; কিন্তু এই উৎসাহ কাজে আসছে না। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান বন্ধই রাখছেন ব্যবসায়ীরা।
কাশ্মির যেসব বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পেত সেগুলো তুলে নেয়ায় উপত্যকাটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের সম্ভাবনা ছিল। তা দমন করতেই নিরাপত্তা কড়াকড়ি করে ভারত। তবে এভাবে বিক্ষোভ দমানো যায়নি। রাজ্যটিতে নেই ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। হাজার হাজার মানুষ গ্রেফতার হয়েছেন। এরপর সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শিথিল করে। কিছু কিছু এলাকায় ফিরেছে ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ; কিন্তু এরপরেও মানুষের আতঙ্ক কাটেনি।
শ্রীনগরের কর্তৃপক্ষ বলছে, উপত্যকার ৯০ শতাংশ এলাকায় আর কোনো কড়াকড়ি নেই; কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শনে তা মনে হয় না। পুরনো শহরের ঐতিহ্যবাহী বাজারের প্রায় সব দোকানই বন্ধ। মানুষজন কদাচিৎ রাস্তায় বের হচ্ছেন। পরিস্থিতিকে ন্যূনতম স্বাভাবিক বলার উপায় নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারের প্রতিশ্রুতিতে তাদের সামান্য আস্থাও নেই। কোনোভাবেই তারা নিরাপদ বোধ করছেন না।